এক বছর ধরে আসাদের পতনের পরিকল্পনা করেন বিদ্রোহীরা
- আপলোড সময় : ১৫-১২-২০২৪ ০৮:৪৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-১২-২০২৪ ০৮:৪৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সিরিয়ার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটাতে এক বছর ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর এ জন্য একটি নতুন ড্রোন ইউনিট মোতায়েন করা হয় এবং সারা দেশের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় তৈরি করে আসাদের পতন ঘটানো হয়। দেশটির প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সামরিক শাখার প্রধান আবু হাসান আল-হামউই এই তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি। বাশার আল-আসাদের ৫৪ বছরের শাসনের পতনের পর প্রথমবারের মতো বিদেশি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি।
এইচটিএসের সামরিক শাখার প্রধান জানান, তার দলের যারা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছিল, কীভাবে দক্ষিণের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধকক্ষ তৈরি করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল উভয় দিক থেকে দামাস্কাসকে ঘিরে ফেলা।
আল-হামউই বলেন, আসাদকে উৎখাতের জন্য আগ্রাসন প্রতিরোধ নামে অভিযানের পরিকল্পনা এক বছর আগে শুরু হলেও, এই দলটি বহু বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকে এইচটিএস একটি সামরিক মতবাদ গড়ে তুলছিল, যা বিভিন্ন বিরোধী এবং জিহাদি গোষ্ঠীর বিশৃঙ্খল যোদ্ধাদের একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীতে পরিণত করেছিল।
গত পাঁচ বছর ধরে সামরিক শাখার নেতৃত্ব দেওয়া আল-হামউই বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে শেষ অভিযানের পর আমরা উল্লেখযোগ্য অঞ্চল হারিয়েছি। সব বিপ্লবী গোষ্ঠী উপলব্ধি করেছিল যে, মূল সমস্যা ছিল নেতৃত্ব এবং যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণের অভাব। ২০১৯ সালে সিরিয়ান শাসনবিরোধী বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালায়, যা বিরোধী দলগুলোকে ইদলিব প্রদেশে ঠেলে দেয়। এরপর ২০২০ সালের বসন্তে তুরস্কের মধ্যস্থতায় বিরোধীদের পক্ষে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, এইচটিএস অন্যান্য দলগুলোকে তাদের অধীনে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়, এবং অস্বীকৃত দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করে। ধীরে ধীরে, তারা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে।
আল-হামউই বলেন, আমরা শত্রুকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছি এবং সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমাদের বাহিনীকে উন্নত করেছি। বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত এই দলটি ধীরে ধীরে একটি সুশৃঙ্খল যুদ্ধ বাহিনীতে পরিণত হয়। সামরিক শাখা, ইউনিট এবং নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করা হয়। এইচটিএস তার নিজস্ব অস্ত্র, যানবাহন এবং গোলাবারুদ তৈরি করতে শুরু করে।
ড্রোন ইউনিট তৈরি করে, যেখানে প্রকৌশলী, মেকানিক এবং রসায়নবিদরা একত্রে কাজ করে। ২০১৯ সাল থেকে তারা ড্রোন তৈরি শুু করে, যার মধ্যে রেইকন ড্রোন, আক্রমণ ড্রোন এবং আত্মঘাতী ড্রোন ছিল।
এইচটিএসের ড্রোনগুলোর সর্বশেষ মডেল ছিল ‘শাহিন’ ড্রোন, যার অর্থ আরবি ভাষায় বাজপাখি। আসাদের পতনে প্রথমবারের মতো এই ড্রোন ব্যবহার করা হয় এবং এটি শাসনের সামরিক যানগুলোকে অকার্যকর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এক বছর আগে এইচটিএস দক্ষিণের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অভিন্ন যুদ্ধকক্ষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ২০১৮ সাল থেকে দক্ষিণ সিরিয়া আসাদের শাসনের অধীনে ছিল। তবে, এইচটিএসের সহায়তায় দক্ষিণের ২৫টি বিদ্রোহী দল মিলে একটি সমন্বিত যুদ্ধকক্ষ গঠন করা হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে তারা অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৯ নভেম্বর আলেপ্পোতে প্রবেশ করে এবং কয়েক দিনের মধ্যে হোমস এবং হামা দখল করে।
আল-হামউই বলেন, আলেপ্পো দখলের পর, দামাস্কাসের দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। দক্ষিণের বিদ্রোহীরা উত্তেজনার কারণে আগেভাগেই বিদ্রোহ শুরু করে এবং দামাস্কাসে পৌঁছে যায়। ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
আল-হামউই মূলত একজন কৃষি প্রকৌশলী, যিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। আসাদের শাসনামলে পরিবারসহ তিনি ইদিলিব থেকে বাস্তুচ্যুত হন। আল-হামউই নতুন বেসামরিক সরকারে কাজ করবেন বলে জানান। তবে নতুন দেশ গঠনের কাজ সহজ হবে না বলেও স্বীকার করেন তিনি। ইসলামপন্থী গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মতবাদ চাপিয়ে দিতে পারে বলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আশঙ্কা করছে বলেও জানান তিনি।
আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া এই বিদ্রোহী নেতা বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের নিশ্চিত করছি যে তারা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা এবং অন্যান্য অধিকার স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। আসাদের শাসন বিভাজন তৈরি করেছে। আমরা এই বিভাজন দূর করে বন্ধনের চেষ্টা করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ